হার্টের রোগের লক্ষণ হলো অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া আর মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্টের রোগীদের লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এছাড়াও হঠাৎ করে শরীর খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভুলেও অবহেলা করবেন না এই রোগ নিয়ে। চলেন জেনে নেই হার্টের রোগের লক্ষণগেুলো কি কি।
১. বুকে ব্যথা হওয়া : সাধারণত যারা হার্টের রোগী তাদের বুকের মাঝখানে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা আস্তে আস্তে চোয়ালে অথবা বাম কাঁধে ও হাতে ছড়িয়ে পড়ে। যদি আপনার এই রকম ব্যথা হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২. কাশি : আপনার যদি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত কাশির সমস্যা হয়ে থাকে এবং কাশির সাথে সাদা বা কিছুটা ঘোলাটে কফ বের হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার হার্ট ঠিক মতো কাজ করছে না। এতে আপনার ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আর হ্যাঁ কাশি সব সময় হার্টে লক্ষণ নাও হতে পারে। যদি কফের সাথে নিয়মিত রক্ত বের হয় তাহলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা থেকে যায়।
৩.অতিরিক্ত ঘাম হওয়া : অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্টের রোগের লক্ষণ। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। শরীর খারাপ হলে আমাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৬. মাথাব্যথা : যখন আমাদের প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। তখন আমরা ওষুধ খেয়ে থাকি। আপনি কি জানেন হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হলো প্রতিদিন পচন্ড মাথা ব্যথা করা।
৫. অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : যদি কাজ করার সময় আপনি প্রায়ই যদি অজ্ঞান হয়ে যান তাহলে বুঝবেন হার্টের রোগের লক্ষণ।
৭. অনিয়মিত পালস রেট : আপনার পালস তখনি ওঠা নামা করবে যখন আপনি অনেক নার্ভাস হবেন বা কোথাও থেকে দৌড়ে আসবেন। তবে এটি যখন কোন কারণ ছাড়ায় হয় তখন এটা চিন্তার বিষয়। হার্টের কারন হয়ে থাকে।
৮.তাড়াতাড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়া : আপনি অল্পতেই কি ক্লান্ত হয়ে যান? কিছুক্ষণ কাজ করার পর আপনার বোক ধড়ফড় করে। তাহলে এখনি আপনি কোন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে মহিলাদের এই কাজ গুলো হয়ে থাকে।
৪. শ্বাসকষ্ট ও দম ফুরিয়ে যাওয়া : যদি আপনার শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও সমস্যা না থাকে এবং হঠাৎ করে শ্বাস নেওয়ার সময় যদি সমস্যা হয় তাহলে এটি হার্টের রোগের লক্ষণ। অল্পতেই যদি আপনার দম ফুরিয়ে যায় বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
what you can learn in this article
হার্টের রোগীর ব্যায়াম

আমাদের সবার উচিত ব্যায়াম করার। এতে আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকে। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন সকালে বা বিকালে ব্যায়াম করতে পারেন। যদি আপনি সকালে ব্যস্ত থাকেন তাহলে আপনি বিকালে অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে পারেন। আপনি চাইলে সাইকেল চালাতে পারেন, জগিং করতে পারেন নিয়মিত দৌড়াতে পারেন। অফিসে আসা যাওয়ার সময় লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার হার্টের ৮০/৮৫ শতাংশ গতি বেড়ে যায়।
ব্যায়াম এর উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ করে :
রোগ হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা । পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কোন রোগ নেই। মানুষ হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হলো রোগ মুক্ত থাকা। আর আমাদের শরীর থেকে রোগ মুক্ত করতে সাহায্য করে ব্যায়াম।
নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য খুব দরকার। এতে আমাদের শরীর অনেক ভালো থাকে। ব্যায়াম আমাদের বড় বড় রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
- যেমন হার্টে অ্যাটাক থেকে
- ক্যান্সার
- রক্ত চাপ
- ডায়াবেটিকস ও অনন্য অনন্য রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ব্যায়াম আপনার চেহারার লাবণ্যতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। এক কথায় বলা যাই সুস্থ থাকতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই তাই আমাদের হার্টের রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে ।
২.ওজন নিয়ন্ত্রণ করে : সুস্থ থাকার জন্য আরেকটি ব্যাপার হলো শরীরের বাড়তি ওজন ও মেদ কমিয়ে ফেলা।
আমাদের বাড়তি ওজন কমাতে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। শরীর চর্চা করলে আমাদের শরীর থেকে অনেক ক্যালোরি খরচ হয়। আমরা যতই ব্যায়াম করবো ততই আমাদের শরীর থেকে ক্যালরি বেড় হয়ে যায়। এতে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে।
৩. যৌন জীবনের জন্য ব্যায়াম : আমাদের দাম্পত্য জীবনে যৌন সুখ পরিবারের উপর প্রভাব ফেলে। যাদের যৌন জীবনে জড়তা বা অনাগ্রহ এসেছে তাদের জন্য ব্যায়াম খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম করলে যৌন মিলনে স্থায়ীত্বকাল বৃদ্ধি পায় এবং আপনার দাম্পত্য জীবনে সুখ আনে।
চলুন জেনে নেই হার্ট ভালো রাখার কিছু ব্যায়াম
অ্যারোবিক ব্যায়াম : আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠুন। আপনি যদি সকালে না করতে পারেন তাহলে বিকালে অ্যারোবিক ব্যায়াম করতে পারেন। দৌড়ানো সাইকেল চালানো এবং জগিং করতে পারেন।
আপনি চাইলে ছন্দে ছন্দে শরীর দোলাতে পারেন। তার সঙ্গে আপনি শ্বাসপ্রশ্বাসের খেলা খেলতে পারেন। এতে করে আপনার শরীর আরও নমনীয় হবে। এতে করে হার্টের রোগের লক্ষণ থাকে না।
সাঁতার কাটা : সাঁতার কাটলে আমাদের শরীর জন্য অনেক ভালো। সাঁতার কাটলে আমাদের শরীরের সার্বিক ব্যায়াম হয়। সাঁতার কাটলে ঘণ্টায় ৫৯০ ক্যালরি খরচ হয় আমাদের শরীর থেকে। হার্ট ভালো রাখতে চাইলে নিয়মিত সাঁতার কাটতে পারেন।
নাচ : নাচ করলে আমাদের শরীর অনেক লরে থাকে। নাচ না জানলেও আপনি গান দিয়ে হাত পা ছুঁড়ুন, যতটা সম্ভব আপনি লাফাতে পারেন। এতে করে আপনার হার্ট ভালো থাকে। আর যারা সবসময় নাচ করে তাদের কোন সমস্যা নাই। নাচার সময় মিনিটে ১২০ থেকে ১৩৫ রেট থাকে হার্টের।
সিঁড়ির ব্যবহার : আপনি অফিসে আসার সময় লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ৮০/৮৫ শতাংশ হার্টের গতি বাড়ে। এতে করে আমাদের রক্ত চলাচল আরও গতিশীল হয়। এতে করে হার্টের রোগের লক্ষণ থাকে না।
হার্টের ব্লক দূর করার ব্যায়াম
হার্টের ব্লক দূর করার জন্য আমাদের প্রতিদিন সকালে হাঁটতে হব। প্রথমে ধীরে ধীরে, তারপর অভ্যাস হলে গেলে মাঝারি গতিতে হাঁটতে পারেন। দিনে ৩০ মিনিট হাঁটুন। যদি আপনার শরীর তৈরি না হয় তাহলে আপনি ১৫ মিনিট হাঁটতে পারেন কোন সমস্যা নেই। সম্ভব হলে দিনে দুইবার হাঁটুন। আর কিছু নিয়ম কানুন আছে।
এই গতিতে প্রতিদিন সকালে হাঁটুন। সকাল দিকে ফাঁকা রাস্তায় হাটতে পারলে আপনার জন্য অনেক ভালো হবে। আর যদি সকালে না পান তাহলে আপনি বিকালে হাটতে পারেন। কাছে কোথাও গেলে আপনি হেটে যেতে পারেন বা সাইকেল দিয়ে। এতে আপনার কাজটাও হয়ে যাবে হাঁটাও হয়ে যাবে।
হার্টের ব্লক কাকে বলে এবং হার্ট অ্যাটাক কেনো হয় চলুন জেনে আসি।
- আমাদের হার্ট ব্লক হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো রক্ত মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও ফ্যাটির কারণে।
- আমাদের হৃদপিণ্ডের ধমনীতে কোলেস্টেরল ও ফ্যাটির কারনে প্লাকের সৃষ্টি হয়। এই প্লাক আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং ধমনী ক্রমে সংকোচিত হয়ে আসে। এভাবে চলতে থাকায় প্লাকের আকার অনেক বড় হয়ে যায়।
- হার্টের রোগের লক্ষণ হলো: ধমনী প্লাকের কারণে হৃদপিন্ডের অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। হার্ড ব্লক বা ধমনী সংকোচিত কারনে প্রায়ই রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়।
- তখন রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌছাতে পারেনা। এর ফলে আপনার ব্যথা শুরু হয় এবং হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- মূলত হৃৎপিণ্ডের ধমনী ব্লক হওয়াকেই হার্ট ব্লক বোঝায়। প্লাকের কারণে হার্টের রক্ত সরবরাহকারী ধমনী ব্লক হওয়াকেই হার্ট ব্লক বলে।
হার্টের ঔষুধের নাম
- আপনার যদি মনে হয় আপনার পাশের কেউ হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে তাহলে আপনি সাথে সাথে একটি এ্যসপিরিন দিন।
- হার্ট অ্যাটাক ব্যক্তিকে এটি চিবিয়ে পানি দিয়ে গিলে খেতে বলুন। যদি আপনার নিশ্চিত না হন যে তার হার্ট অ্যাটাক হয় নাই।
- এতে এ্যসপিরিন কোন ক্ষতি করবে না তার।
- যদি হাসপাতালের যাওয়ার সময় হয়ে থাকে তাহলে তাকে নাইট্রোগ্লিসারিন দিন।
- হৃদপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন সহজ করার জন্য, এবং ব্যথা ও ভয় কাটানোর জন্য আপনি চাইলে মটফিনও ব্যবহার করতে পারেন।
নাইট্রোগ্লিসরিন
সৃষ্ট বুকের ব্যথার চিকিৎসার জন্য নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়। এটি আমাদের রক্ত নালীকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে।
হার্টের ব্যাথা বুকরে কোন পাশে হয়
হার্ট অ্যাটাক এর সিগন্যাল হিসেবে আমাদের কোথায় ব্যথা হয়? এর উত্তর হলো :
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা আমাদের বুকের মাঝখান থেকে শুরু হয়। এটি আপনার বুকের বাঁদিকেও মোচড় দিয়ে ব্যথা উঠতে পারে। হঠাৎ করে আপনার প্রচন্ড ব্যথা হবে। হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা শীত কাল আসলেই বেড়ে যায়। শুধু মাত্র বয়স বেশি মানুষের হবে তা কিন্তু নয়। হার্ট অ্যাটাক কম বয়সী মানুষেরও হয়ে থাকে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য এখন থেকেই সচেতন থাকুন। হার্ট সুস্থ রাখার কিছু নিয়ম কানুন আছে, তেমনেই হার্টের রোগের লক্ষণ গুলো চিনে রাখা প্রয়োজন। যদি ঠিক সময় সিগন্যাল দিলেও আপনি তা বুঝতে পারবে না।
জেনে নেই হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা কোথা থেকে শুরু হয়।
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা বুকের মাঝখান থেকে শুরু হয়। এটি আপনার বুকের বাঁদিকে মোচড় দিয়ে হতে পারে। হঠাৎ করেই আপনার প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে। মনে হবে আপনার শ্বাস আটকে যাচ্ছে। এসময় আপনার বুকে প্রচুর চাপ অনুভূত হবে। এটি আপনার বুক থেকে আপনার বাম হাত দিয়ে ব্যথাটা ধীরে ধীরে নামতে পারে। এতে করে আপনার প্রচণ্ড মাথা ঘুরতে পারে এবং সাথে বমিও হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের জন্য যে আপনার এই গুলো লক্ষণ দেখা দিবে তা কিন্তু না।
নারীদের মধ্যে যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের হার্টের রোগের লক্ষণ অন্য দিক দিয়ে আসতে পারে। নারীদের খুব বেশি বুকে ব্যথা না হলে অন্য লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে হালকা থেকে বেশি শ্বাস কষ্ট হয়ে থাকে। যখন আপনার মনে হবে আপনার অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। তখন আপনার মনে হবে একটু অক্সিজেন পেলে ভালো হতো। হঠাৎ করে মাথা ঘুরে যেতে পারে এবং প্রচন্ড ঘাম হতে পারে।